ঢাকা   শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

গণতন্ত্রের মোড়কে বাকশাল কায়েম করতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা: জোনায়েদ সাকি

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৭ পিএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৭ পিএম

 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ৭৫ সালের বাকশাল ছিল ৭২-এর সংবিধানে ক্ষমতার কাঠামোর ধারাবাহিকতা। শেখ হাসিনাও বাকশাল ২.০ তৈরি করতে চেয়েছিলেন ওই একই সংবিধানে। তিনি ভেবেছিলেন, গণতন্ত্রের মোড়কে বাকশাল চলবে। সেটাই তিনি কায়েম করতে চেয়েছিলেন।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহী নগরের সাহেববাজার বড় মসজিদ চত্বরে ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য’ গণসংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ একটা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিদায় করেছে। তারা নতুন রাজনৈতিক শক্তি দেখতে চায়। কিন্তু আমাদের সেই রাজনৈতিক শক্তি আছে? আমরা কি ছাত্র-জনতাকে এখনও ঐক্যবদ্ধ করে রাখতে পেরেছি? এই অভ্যুত্থান দাবি করে, বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে উঠুক। কাজেই আগামী নির্বাচনের আগেই আমাদেরকে জনগণের রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, ঘুষ-দুর্নীতি ছাড়া কোনো চাকরি নয়, কোনো পদোন্নতি নয়, কোনো বদলি নয়, যে সার্ভিসেই যান। পুরো রাষ্ট্রটাকে সাজানো হয়েছিল বিরোধী দলের ওপর নির্যাতনের জন্য। তাদের ভয় দেখানোর জন্য। তাদেরকে ক্রসফায়ারে গুলি করা, নিয়ে গিয়ে গুম করে দেওয়া। কিংবা মধ্যরাতে একটা স্ট্যাটাস দেওয়ার জন্য ক্লাস টেনের একজন শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে আসা। এই ছিল তাদের শাসন। ত্রাসের রাজত্ত কায়েম কর, এভাবে টিকে থাক।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, এই শাসনব্যবস্থায় তারা এভাবে টিকে থেকে মনে করেছে এটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হবে। এইখান থেকে আপনাদের কেউ সরাতে পারবে না। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি যখন নির্বাচনটা করে ফেলতে পারলো। ২৮ অক্টোবর আমাদের যে সমাবেশগুলো ছিল। তখন তারা বিএনপির সমাবেশ, মিছিলে এজেন্ট ঢুকিয়ে পরিকল্পিত সন্ত্রাস তৈরি করে তারা সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছে। তারা ভেবেছিল ছাত্রদের কেউও একইভাবে দমন করে ফেলা যাবে। শেখ হাসিনা তো তুরি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন। ১৪ তারিখে শেখ হাসিনা ছাত্রদের অপমান করলেন। ভাবলেন এদের (ছাত্রদের ) যদি রাজাকারের নাতি-পুতি বলা যায়—তাহলে হয় তো এই দেশের মানুষ ঘুরে যাবে। কিন্তু ঘুরে যায়নি মানুষ।

তিনি বলেন, বহুবার আমরা বলেছি, মানুষের জীবনের চেয়ে সম্মান অনেক বড়। যখন সম্মান কিংবা ইজ্জতে আঘাত লাগে, তখন মানুষ জীবন দিতে প্রস্তুত থাকে। আমরাও দেখেছি শিক্ষার্থীরা ১৪ তারিখ রাতে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাস ও ছাত্রীরা হল ভেঙে বেড়িয়ে এসেছে। শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিয়েছে—‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’। তার জবাব দিয়ে দিয়েছে। ১৫ তারিখ বিক্ষোভ হয়েছে শেখ হাসিনা ভেবেছেন তার গুন্ডাবাহিনী দিয়ে দাবড়ানি দিয়ে ভয় দেখালে ছাত্ররা সড়ে যাবে। কিন্তু যায়নি। এই রাষ্ট্র আমরা বদলাতে চাই। যাদের আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা। তারা আমাদেরকে গুলি করে মেরে ফেলে। আয়না ঘরে নিয়ে ঢুকিয়ে রাখে। শুধু রাজনৈতিক ভিন্নমত স্মরণ করার জন্য।

তিনি আরও বলেন, ওনারা বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকতে চায়। শেখ হাসিনা বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছে। প্রশাসনকে তারা এইভাবে ব্যবহার করেছে। প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান, জেনারেল আজিজ সম্পত্তি কীভাবে বানিয়েছে! ওই বেনজির আহমেদ কীভাবে সম্পদ গড়েছে! এরা এইভাবে লোভ-লালসা ও লুটের ভাগ-বাঁটোয়ারা দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। আমরা পরিস্কারভাবে বলি—একটা সরকার তার অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কুলসিত করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর যে-সব কর্মকর্তারা কুলসিত করেছে লুটপাত করে। তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ন্যায় বিচার হবে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা। সবার কাছে বার্তা থাকা দরকার। কোনো সরকারি কর্মকর্তা কোনো অবৈধ সরকারের এই রকম পা চেটে দেশকে বিপর্যয়ের দিকে নেয় তার শাস্তি কি হবে এটা বাংলাদেশের সবার খেয়াল রাখা দরকার।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইনের সংস্কার করতে হবে। আর তার ভিত্তিতে এমন নির্বাচন ব্যবস্থা আয়োজন করতে হবে, যাতে বাংলাদেশে আর কেউ মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে। নতুন নির্বাচন কমিশন হয়েছে। আপনারা (নির্বাচন কমিশন) এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন, যাতে আর কেউ নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে। বৈষম্যহীন রাষ্ট্র যদি পেতে হয়, তাহলে আমাদের একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে হবে। তার ভিত্তি হবে গণতান্ত্রিক সংবিধান। এই ফ্যাসিস্ট সংবিধান নয়, হতে হবে একটা গণতান্ত্রিক সংবিধান।

গণসংলাপে সভাপতিত্ব করেন, গণসংহতি আন্দোলনের রাজশাহী জেলার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ। বিশেষ বক্তা ছিলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জুলহাসনাইন বাবু। জেলার সদস্য সচিব জুয়েল রানা এই গণসংলাপ সঞ্চালনা করেন। গণসংলাপে রাজশাহীর শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আবু সাঈদকে নিয়ে হাসিনার দাবি কতটুকু সত্য
আওয়ামী লীগকে কবর দিয়েছেন শেখ হাসিনা
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
আলেম সমাজের সাথে ঐতিহাসিক সুসম্পর্ক রয়েছে বিএনপির: ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাছির
আরও

আরও পড়ুন

আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ পা থেকে ১১০ দিন পরে বের করা হলো বু্লেট

আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ পা থেকে ১১০ দিন পরে বের করা হলো বু্লেট

বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের ইস্যু তুলে ঝাড়খণ্ডে জিততে পারে নি বিজেপি, তবে মহারাষ্ট্রে বড় জয়

বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের ইস্যু তুলে ঝাড়খণ্ডে জিততে পারে নি বিজেপি, তবে মহারাষ্ট্রে বড় জয়

আবু সাঈদকে নিয়ে হাসিনার দাবি কতটুকু সত্য

আবু সাঈদকে নিয়ে হাসিনার দাবি কতটুকু সত্য

বগুড়ায় কনসার্টের ভীড়ে ছুরিকাঘাতে যুবকের মৃত্যু

বগুড়ায় কনসার্টের ভীড়ে ছুরিকাঘাতে যুবকের মৃত্যু

অনলাইন জুয়ার প্রচারণায় বুবলী

অনলাইন জুয়ার প্রচারণায় বুবলী

রিংয়ে আমিনুল-সানজিদাদের উৎসব

রিংয়ে আমিনুল-সানজিদাদের উৎসব

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির কাউন্সিলে প্রত্যক্ষ ভোটে সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির কাউন্সিলে প্রত্যক্ষ ভোটে সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত

আওয়ামী লীগকে কবর দিয়েছেন শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগকে কবর দিয়েছেন শেখ হাসিনা

রোচ-গ্রেভস জুটি ভাঙতে পারছে না বাংলাদেশ

রোচ-গ্রেভস জুটি ভাঙতে পারছে না বাংলাদেশ

মোমবাতি প্রজ্বলনে তাজরীন ট্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মরণ

মোমবাতি প্রজ্বলনে তাজরীন ট্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মরণ

সিসিকের সাবেক কাউন্সিলর ১৩ মামলার আসামী আ‘লীগ নেতা লায়েক গ্রেফতার

সিসিকের সাবেক কাউন্সিলর ১৩ মামলার আসামী আ‘লীগ নেতা লায়েক গ্রেফতার

যার হাত ধরে পরীমনি এসেছিলেন চলচ্চিত্রে,তার মরণ দিনে করলেন খাসি জবাই

যার হাত ধরে পরীমনি এসেছিলেন চলচ্চিত্রে,তার মরণ দিনে করলেন খাসি জবাই

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবর্তন হচ্ছে লেকের নাম, নতুন নাম ‘মুগ্ধ সরোবর’

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবর্তন হচ্ছে লেকের নাম, নতুন নাম ‘মুগ্ধ সরোবর’

সোনারগাঁয়ে বিএনপির কার্যালয় উদ্বোধন

সোনারগাঁয়ে বিএনপির কার্যালয় উদ্বোধন

সেনবাগে ইসলামী আন্দোলনের গণ সমাবেশে আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধের দাবী

সেনবাগে ইসলামী আন্দোলনের গণ সমাবেশে আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধের দাবী

পঞ্চগড়ে সিন্ডিকেট ভাঙতে তেঁতুলিয়ায় ৫৫ টাকায় আলু বিক্রি

পঞ্চগড়ে সিন্ডিকেট ভাঙতে তেঁতুলিয়ায় ৫৫ টাকায় আলু বিক্রি

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক ধর্ম উপদেষ্টা ড.খালিদ হোসেন

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক ধর্ম উপদেষ্টা ড.খালিদ হোসেন

সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স

সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন